‘জুলাই বিপ্লব’ ২০২৪ সনে বাংলাদেশে সংঘটিত ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থান
‘জুলাই বিপ্লব’ ২০২৪ সনে বাংলাদেশে সংঘটিত ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানকে অভিহিত করা হয়। জুলাই
বিপ্লব নামে পরিচিত ছাত্র-জনতার আন্দোলন হচ্ছে বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক গণঅভ্যুত্থান
যা ২০২৪ সালের ৫ জুন থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত অগণিত শহিদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে বিগত
১৬ বছরের স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটিয়েছে।
এক
নজরে ছাত্র-জনতার জুলাই অভ্যুত্থান
ঐতিহাসিক এই জুলাই বিপ্লবের বিজয়ের ধারার
সূচনা হয়েছিল সরকারি চাকুরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবির আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। এটি
পরে সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে আরো প্রবল হয়ে উঠেছিল যা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট চূড়ান্ত
রূপ লাভ করে।
আন্দোলনের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে
বিগত প্রায় পনের বছরেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে
টিকতে না পেরে ৫ আগস্ট দুপুরের কিছু আগে হেলিকপ্টার যোগে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য
হন।
Read More:মেয়েদের ইসলামিক নাম অর্থসহ পূনাঙ্গ ও সুন্দর আধুনিক নাম
সেই দিন, জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে
বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের কথা
ঘোষণা দেন এবং সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে সকল হত্যার তদন্ত ও বিচারের প্রতিশ্রুতি
দেন।
হাসিনা সরকারের পতনের তিন দিন পর ৮৪ বছর
বয়সী দেশের একমাত্র নোবেল বিজয়ী এবং ক্ষুদ্রঋণের পথিকৃৎ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে
প্রধান উপদেষ্টা করে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়।
ছাত্র-জনতার
গণঅভ্যুত্থানের ঘটনাবলির একটি ঘটনাপঞ্জি:
৫
জুন ২০২৪: সরকারি চাকুরির নিয়োগ ব্যবস্থায় কোটা পদ্ধতি সংস্কারের
দাবিতে দেশব্যাপী বিক্ষোভের মধ্যে ২০১৮ সালে সরকার কর্তৃক জারি করা সার্কুলারকে অবৈধ
ঘোষণা করে রায় দেয় সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ। ঘোষণার পরপরই, শিক্ষার্থীরা রাস্তায়
নেমে আসে এবং বিভিন্ন শ্রেণীর লোকদের জন্য ৫৬% চাকরি সংরক্ষণ করার সুবিধা দেয়ার কোটা
পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে সারা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে।
সরকার এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রিম
কোর্টে আপিল করলেও শিক্ষার্থীরা ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করতে অস্বীকার করে এবং কোটা বাতিলের
নতুন নির্বাহী আদেশের দাবি জানায়।
৬
জুন ২০২৪: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী
বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের
শিক্ষার্থীরা কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করে। তবে ঈদুল আজহা উদযাপনের
কারণে বিক্ষোভ শান্ত হলেও বিরতির পর তা আবার শুরু হয়।
১
জুলাই ২০২৪: ২৪ দিনের বিরতির পর, শিক্ষার্থীরা কোটা বাতিলের নতুন নির্বাহী
আদেশের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এবং আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ
করে। এরপর আন্দোলনকারীরা দাবি পূরণের জন্য ৪ জুলাই সময়সীমা নির্ধারণ করে।
২
জুলাই ২০২৪: শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড় এক ঘণ্টা অবরোধ করে বিক্ষোভ করে
এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে এবং জাহাঙ্গীরনগর
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সামনে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অন্তত ২০ মিনিট অবরোধ করে রাখে।
৩
জুলাই ২০২৪: শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার
চত্বর থেকে একটি মিছিল বের করে এবং শাহবাগে বিক্ষোভ মিছিল করে নগরীর অন্যতম ব্যস্ত
মোড়টি দেড় ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে। এছাড়া, ছাত্ররা অন্যান্য কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে
নিয়মিত বিক্ষোভ অব্যাহত রাখে।
Read More: বাংলাদেশের সংবাদপত্রসমূহ। List of All Bangla Newspapers
৪
জুলাই ২০২৪: আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেনি যা কার্যত কোটা
বাতিলের ২০১৮ সালের সার্কুলারকে অবৈধ করেছে। ফলে শিক্ষার্থীরা সারাদেশে তাদের বিক্ষোভ
আরও তীব্র করে।
৫
জুলাই ২০২৪: সারাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রচারণা জোরদার
করার জন্য, ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি,
বিক্ষোভ, সমাবেশ এবং সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করে এবং ৭ জুলাই (রোববার) থেকে ক্লাস
পরীক্ষা বর্জনের আহ্বান জানিয়ে দিনের কর্মসূচি শেষ করে। তারা এর পাশাপাশি ৬ জুলাই
(শনিবার) প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করে।
এদিন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা
বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়,
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অবস্থান, বিক্ষোভ সমাবেশ ও রাস্তা অবরোধ করে।
৬
জুলাই ২০২৪: বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির প্রথম
দিনে রাজধানীর শাহবাগ, নীলক্ষেত, হেয়ার রোড, মিন্টো রোড, সায়েন্স ল্যাব, বাংলামোটর
মোড় এবং ঢাকা-আরিচা ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ প্রধান প্রধান সড়কগুলো কয়েক ঘন্টার
জন্য অবরোধ করে রাখে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শাহবাগ
মোড়ে, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা সায়েন্স ল্যাব মোড়ে, ইডেন কলেজের শিক্ষার্থীরা নীলক্ষেত
মোড়ে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে এবং কুমিল্লা
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবরোধ করে।
দিনের কর্মসূচি শেষে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা
সংসদে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে সরকারি চাকুরির সব গ্রেডে অযৌক্তিক কোটা বাতিলের ‘এক দফা’
দাবি নিয়ে অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
৭
জুলাই ২০২৪: বাংলা অবরোধে শিক্ষার্থীরা রাজধানীতে অবরোধ কর্মসূচি পালন
করায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্থবির হয়ে পড়ে ঢাকা মহানগরী। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে
সামঞ্জস্য রেখে সারাদেশের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেয়
শিক্ষার্থীরা।
৮
জুলাই ২০২৪: শিক্ষার্থীরা এদিন ঢাকার ১১টি স্থানে অবরোধ কর্মসূচি, নয়টি
বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ, ছয়টি মহাসড়কসহ তিনটি স্পটে রেলপথ অবরোধ করে।
৯
জুলাই ২০২৪: বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন দেশের সড়ক ও রেলপথের গুরুত্বপূর্ণ
পয়েন্টে ভোর থেকে সন্ধ্যা অবরোধের ঘোষণা দেয়। এদিকে, হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আইনজীবীর
মাধ্যমে আপিল করেন দুই শিক্ষার্থী।
১০
জুলাই ২০২৪: এদিন আপিল বিভাগ চার সপ্তাহের জন্য কোটার ওপর স্থিতাবস্থা
জারি করেন। সব গ্রেডে সরকারি নিয়োগে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
১১
জুলাই ২০২৪: আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, কোটা
আন্দোলনকারীরা দেশের সর্বোচ্চ আদালতের বিরুদ্ধে তাদের পেশীশক্তি ব্যবহার করছে, যা অযৌক্তিক
ও বেআইনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আন্দোলনকারীরা ‘সীমা অতিক্রম করছে’।
শিক্ষার্থীরা রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ
মোড়ে এবং মহানগরীর বাইরে মহাসড়কে অবস্থান বিক্ষোভ করে এবং পুলিশের বাধা সত্ত্বেও
সড়ক, মহাসড়ক এবং রেলপথে যান চলাচল ব্যাহত করে।
১২
জুলাই ২০২৪: বিকেল ৫টার দিকে শিক্ষার্থীরা শাহবাগে জড়ো হয়ে এলাকা
অবরোধ করে। এদিকে, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করতে গেলে ছাত্রলীগের
একটি দল আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় ভিডিও ধারণকারী এক শিক্ষার্থীকে একটি
হলে নিয়ে গিয়ে মারধর করে ছাত্রলীগের সদস্যরা।
১৩
জুলাই ২০২৪: সাপ্তাহিক ছুটির
দিন থাকলেও দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে বিক্ষোভ মিছিল করে শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল শেষে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রেললাইন অবরোধ করে বিক্ষোভ করে।
পরে শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যায় ঢাকায় একটি
সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ জানায় যে, মামলা দিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বাধা দেওয়ার
চেষ্টা করা হচ্ছে। তারা ঘোষণা করে যে পরের দিন তারা সব গ্রেডের সরকারি চাকুরিতে কোটা
সংস্কারের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দেবে।
১৪
জুলাই ২০২৪: শিক্ষার্থীরা রাজধানীতে অবস্থান বিক্ষোভ ও অবরোধসহ মিছিল
বের করে এবং পরে তাদের দাবি জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের কাছে স্মারকলিপি
পেশ করে। সন্ধ্যায় গণভবনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনরত
শিক্ষার্থীদের রাজাকারের সন্তান বলে উল্লেখ করে বিতর্কিত মন্তব্য করেন, যা আন্দোলনকে
আরও উসকে দেয়।
Read More: কোন সমস্যার জন্য কোন ডাক্তারের কাছে যাবেন? ইবনে সিনা হাসপাতাল ধানমন্ডি
শেখ হাসিনার বক্তব্যের জবাবে শিক্ষার্থীরা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এলাকায় মধ্যরাতে বিক্ষোভ মিছিল করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
সব মহিলা হলের ছাত্রীরা ছাত্রাবাসের গেটে কর্তৃপক্ষের লাগানো তালা ভেঙে বিক্ষোভে যোগ
দেয়।
সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ফোরজি
নেটওয়ার্ক বন্ধ করতে অপারেটরদের নির্দেশ প্রদান করে। এদিকে, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হামলায়
১৩ আন্দোলনকারী আহত হন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েও বিক্ষোভ
করে শিক্ষার্থীরা।
১৫
জুলাই ২০২৪: আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে
দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমকে বলেন, দলের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ
শিক্ষার্থীদের ‘উচিত জবাব’ দেবে। ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালায় এবং নির্বিচারে
তাদের পিটিয়ে অন্তত ৩০০ বিক্ষোভকারীকে আহত করে।
হেলমেট পরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সন্ধ্যা
সাড়ে ৭টার দিকে জোর করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে রড ও চাইনিজ কুড়াল নিয়ে
প্রবেশ করে এবং পরে ঢামেক হাসপাতালের ভেতরে ও বাইরে আহত বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালায়।
হাসপাতালের ভিতরে পার্ক করা বেশ কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুর করে।
কয়েক ঘণ্টার সংঘর্ষের পর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি ছাত্রাবাস- ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল, ফজলুল হক মুসলিম
হল ও অমর একুশে হলের নিয়ন্ত্রণ নেয়।
এদিকে, সন্ধ্যায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের রাজশাহী শাখার হামলায় ছয় শিক্ষার্থী আহত হয়। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ককে ফোন চেক করার কথা বলে ডেকে ছাত্রলীগের লোকজন
তাকে লাঞ্ছিত ও মারধর করে।
আন্দোলনকারীরা ১৬ জুলাই বিকাল ৩টায় দেশের
সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেশব্যাপী বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ডাক দেন।
১৬
জুলাই ২০২৪: সারাদেশে শিক্ষার্থীরা ব্যাপক বিক্ষোভ করে। আন্দোলনকারীদের
ওপর ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ ক্ষমতাসীন দলের লোকজন হামলা চালায়। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে
ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের
তুমুল সংঘর্ষে অন্তত ছয়জন নিহত হয়।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু
সাঈদ নিহত হওয়ার ফুটেজ ও ছবি এদিন ভাইরাল হওয়ায় রাতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা পাল্টা
প্রতিরোধ গড়ে তুলে এবং ছাত্রলীগকে ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাড়িয়ে দেয়।
তারা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ নেতাদের কক্ষ ভাংচুর করার পাশাপাশি ঢাবি ও
রাবি হলের বেশির ভাগ রুমের নিয়ন্ত্রণ নেয়।
এর প্রেক্ষিতে শেখ হাসিনার সরকার দেশব্যাপী
স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেয়। তবে পরদিন গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিলের
নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে শিক্ষার্থীরা।
১৭
জুলাই ২০২৪: সকালের দিকে আন্দোলনকারীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন
ক্যাম্পাস থেকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের তাড়িয়ে দেয় এবং ক্যাম্পাসকে
'রাজনীতিমুক্ত' ঘোষণা করে।
ছাত্ররা নিহতদের জন্য 'গায়েবানা জানাজা'
আদায় করার চেষ্টা করে, কিন্তু পুলিশ তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের সমাবেশে হামলা চালায়।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাস বন্ধ করে ছাত্রদের তাদের ছাত্রাবাস খালি করার নির্দেশ
দেয়।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে, হাসিনা জাতির
উদ্দেশে ভাষণ দেন এবং ঘোষণা করেন যে, তিনি অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে বিচার বিভাগীয়
তদন্ত শুরু করবেন। কোটা প্রসঙ্গে তিনি শিক্ষার্থীদের সুপ্রিম কোর্টের রায়ের জন্য অপেক্ষা
করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এই সিদ্ধান্ত তাদের হতাশ করবে না।
শিক্ষার্থীরা পরের দিনের জন্য সারা দেশে
পরিবহণ চলাচল বন্ধ রাখর জন্য ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির আহ্বান জানায়।
১৮
জুলাই ২০২৪: 'সম্পূর্ণ শাটডাউন' কর্মসূচির প্রেক্ষিতে ঢাকায় ও অন্যান্য
৪৭টি জেলায় ব্যাপক সহিংসতা ঘটে। হাজার হাজার শিক্ষার্থী পরিবহন বন্ধ কার্যকর করার
জন্য অন্যান্য বিভিন্ন গ্রুপের সাথে যোগ দেয়। পুলিশ ও অজ্ঞাত ব্যক্তিরা বুলেট, শটগানের গুলি
ও রাবার বুলেট দিয়ে তাদের উপর গুলি চালালে কমপক্ষে ২৯ জন শহীদ হওয়ার নিশ্চিত খবর
পাওয়া যায়। পুলিশ ও ছাত্রলীগের লোকজন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের
শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়।
আন্দোলনকারীরা বিটিভি ভবন, সেতু ভবন ও
অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। সারা দেশে ইন্টারনেট পরিষেবা
বন্ধ রাখা হয় এবং মেট্রো রেলের কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়।
ঢাকা ছাড়াও দেশের ৪৭টি জেলায় বিক্ষোভ,
সংঘর্ষ, পুলিশের গুলি ও হামলার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় আহত হয় অন্তত ১৫০০ জন। কোথাও
কোথাও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে এবং কিছু জায়গায় ক্ষমতাসীন দলের লোকজনের
সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়।
সারাদেশে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি)
সদস্য মোতায়েন করা হয়।
১৯
জুলাই ২০২৪: এই দিনে, শেখ হাসিনা সরকার মধ্যরাতে দেশব্যাপী কারফিউ জারি
করে এবং দিনব্যাপী সহিংসতায় কমপক্ষে ৬৬ জন নিহত হওয়ার পর সেনাবাহিনী মোতায়েন করে।
নরসিংদীর কারাগার, মেট্রোরেল স্টেশন ও বিআরটিএ অফিসসহ আরও সরকারি প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর
ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে বাধা দেয়ার প্রয়াসে,
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ জনসমাগম ও মিছিল অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করে। ১৮
জুলাই থেকে ইন্টারনেট অ্যাক্সেস দেশব্যাপী বন্ধ রাখা হয়।
তবে শিক্ষার্থীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিকে
কেন্দ্র করে নজিরবিহীন সহিংসতা, গুলি, অগ্নিসংযোগ ও মৃত্যুতে কেঁপে ওঠে রাজধানী ঢাকা।
মিরপুর ১০ ও কাজীপাড়া মেট্রো স্টেশনে ভাঙচুর চালানো হয়। অন্যান্য জেলায়ও সংঘর্ষ
ঘটে।
কেবল ঢাকা মহানগরীতেই গুলি ও সংঘর্ষে অন্তত
৪৪ জন নিহত হয়। ঢাকার বাইরে মোট ৫৯ জন নিহত হয়। এতে ছাত্র, রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী,
পুলিশ, সাংবাদিক, পথচারীসহ কয়েক শতাধিক মানুষ আহত হয়। শুরু থেকে শুধু শিক্ষার্থীরা
আন্দোলনে অংশ নিলেও শুক্রবার স্থানীয়দেরও আন্দোলনে যোগ দিতে দেখা গেছে।
সারাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের ডাক ব্যাপকভাবে
অব্যাহত রয়েছে।
সকাল ১০টার দিকে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি
বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) শিক্ষকরা মুখে কালো চাদর পরে বিক্ষোভ করেন। বেলা আনুমানিক
১২:৪৫ মিনিটে, কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব থানায় বিক্ষোভকারীরা থানা ঘেরাও করার পরে, পুলিশ
স্টেশনের ভিতর থেকে জনতার উপর গুলি চালায়, এতে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়।
নরসিংদীতে, জনতা কারাগারে ঢুকে জেলা কেন্দ্রীয়
কারাগার থেকে প্রায় ৯০০ বন্দিকে মুক্ত করে দেয় এবং ৮০টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ১০০০ রাউন্ডের
বেশি গুলি লুট করে।
সারাদেশে বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে মোট ১০৩
জন নিহত হয়। রাতে কারফিউ জারি করা হয়; সেনা সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। সারাদেশে
ইন্টারনেট পরিষেবা পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
২০
জুলাই ২০২৪: সেনা মোতায়েনের মধ্যে কারফিউর প্রথম দিনে অন্তত ২৬ জন
নিহত হয়। যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, বাড্ডা ও মিরপুরে ছিল সংঘর্ষের মূল পয়েন্ট। মোহাম্মদপুরেও
সংঘর্ষ হয়। কারফিউর প্রথম দিনেই অন্তত ২৬ জন নিহত হয়।
সরকার পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত
কারফিউ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয় এবং দুই দিনের 'সাধারণ ছুটি' ঘোষণা করে। কোটা আন্দোলনের
নেতা এবং বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) কয়েকজন নেতাকে আটক করা হয়।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মূল সমন্বয়ক
নাহিদ ইসলামকে ওই দিন ধরে নিয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
২১শে
জুলাই ২০২৪: সুপ্রিম কোর্ট কোটা মামলায় রায় প্রদান করে, সিভিল সার্ভিসের
চাকরির বেশিরভাগ কোটা বিলুপ্ত করে এবং সিভিল সার্ভিসে ৯৩% শতাংশ নিয়োগ মেধার ভিত্তিতে
সাধারণ আবেদনকারীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়। কোটার মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা
ও বীরাঙ্গনাদের সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ, জাতিগত সংখ্যালঘুদের জন্য এক শতাংশ এবং শারীরিক
প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য এক শতাংশ কোটা নির্ধারণ করা হয়।
এদিকে, বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ৫৬ জন সমন্বয়কের
পক্ষ থেকে সংবাদকর্মীদের কাছে একটি যৌথ বিবৃতি পাঠানো হয় যাতে শিক্ষার্থীদের ‘কমপ্লিট
শাটডাউন’ আরও জোরদার করার আহ্বান জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ৩০০ জনেরও বেশি ছাত্র
ও মানুষ নিহত হয়েছে। শুধুমাত্র আদালতের আদেশ ব্যবহার করে সরকার হত্যার দায় এড়াতে
পারে না। বিবৃতিতে আরো বলা হয়, পুলিশ কিছু মূল সংগঠককে তুলে নিয়ে গেছে এবং তাদের
বিবৃতি দিতে বাধ্য করার ব্যর্থ চেষ্টা করেছিল।
সহিংসতা নিয়ে জাতিসংঘ, ইইউ, যুক্তরাজ্যের
উদ্বেগ প্রকাশ করায় তিন বাহিনীর প্রধানরা (সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী) হাসিনার সঙ্গে
দেখা করেন। কারফিউ চলতে থাকে এবং আরও সাতজন নিহত হয়।
২২শে
জুলাই ২০২৪: আগের দিনের সংঘর্ষে আহত অন্তত ছয়জন মারা গেছেন। শেখ হাসিনা
বিএনপি ও জামায়াতকে হুঁশিয়ারি দেন। স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে পাওয়ার আশা প্রকাশ করেছেন
সেনাপ্রধান। আন্দোলন দমনে বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের গ্রেফতার অব্যাহত রয়েছে।
আদালতের আদেশের ভিত্তিতে প্রণীত কোটা সংস্কার
সংক্রান্ত গেজেট প্রজ্ঞাপনের অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিন সংঘর্ষে
আরও ১৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে এবং মৃতের সংখ্যা ১৮৭-এ দাঁড়িয়েছে।
২৩
জুলাই ২০২৪: সুপ্রিম কোর্টের রায়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সরকার কোটা
পদ্ধতি সংস্কারের সার্কুলার জারি করলেও কোটা সংস্কার আন্দোলনের চার সংগঠক তা প্রত্যাখ্যান
করেন। কারফিউর মধ্যেও বিরোধী নেতা ও বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গ্রেপ্তার ও অভিযান
অব্যাহত রয়েছে। সেদিনও বহু মানুষ নিহত হয়। বিরোধী দলের নেতাদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত
রয়েছে।
ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবাগুলি ধীরে
ধীরে অগ্রাধিকার দিয়ে পুনরায় চালু করা হয়। পরের দিন সম্পূর্ণ চালু করা হয়।
২৪
জুলাই ২০২৪: আন্তঃজেলা বাস ও লঞ্চ চলাচল আংশিকভাবে চালু রয়েছে। ব্রডব্যান্ড
ইন্টারনেট পরিষেবা পুনরায় চালু করা হয়।
এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম
‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর তিন সমন্বয়কারীকে পাঁচ দিন ধরে নিখোঁজ থাকার পর
পাওয়া যায়। আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার এবং রিফাত রশিদকে ১৯ জুলাই অজ্ঞাত ব্যক্তিরা
তুলে নিয়েছিল। আসিফ এবং বাকের দুজনেই ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন যে, পাঁচ দিন তাদের চোখ
বেঁধে রাখা হয়েছিল। রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকায় আসিফ মাহমুদকে এবং ধানমন্ডি এলাকায়
আবু বকরকে চোখ বেঁধে ছেড়ে দেয়া হয়।
২৫
জুলাই ২০২৪: জাপা নেতা আন্দালিব রহমান পার্থ, ব্যবসায়ী ডেভিড হাসনাত
সহ আরও ডজন খানেক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সোশ্যাল মিডিয়া বন্ধ রাখা হয়। জাতিসংঘ,
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ক্র্যাকডাউন বন্ধ করার আহ্বান
জানায়। সেনা মোতায়েনের পর হাসিনা প্রথম জনসমক্ষে উপস্থিত হন এবং একটি ক্ষতিগ্রস্ত
মেট্রো রেল স্টেশন পরিদর্শন করেন।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও তিনজন মারা যান,
মৃত্যুর সংখ্যা ২০৪ জনে দাঁড়ায়। শুক্রবার ও শনিবার সপ্তাহান্তে ৯ ঘণ্টার জন্য কারফিউ
শিথিল করা হয়। অ্যামনেস্টি বলেছে যে, পুলিশ বিক্ষোভকারীদের উপর প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার
করেছে।
শিক্ষার্থীরা বলেছেন, তারা স্টেকহোল্ডারদের
সঙ্গে আলোচনা না করেই কোটা সংস্কারের সার্কুলারে কোন সমাধান দেখছেন না। সমন্বয়কারী
নাহিদ ইসলামের এক বিবৃতিতে বলা হয়, কোটা নিয়ে সংসদে কোনো আইন পাস হয়নি তাই এখনো
চূড়ান্ত সমাধান হয়নি।
২৬
জুলাই ২০২৪: পুলিশের গোয়েন্দা শাখা তিন সংগঠককে তুলে নেয়। সারা দেশে
'ব্লক রেইড' শুরু। অন্তত ৫৫৫টি মামলা হয়েছে এবং ৬,২৬৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কারফিউ
ঘোষণার পর জনসমক্ষে হাজির হওয়ার দ্বিতীয় দিনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন
করেন হাসিনা। জাতিসংঘ ক্র্যাকডাউন বন্ধ এবং ইন্টারনেট পরিষেবা সম্পূর্ণ পুনরুদ্ধারের
আহ্বান জানিয়েছে।
বাংলাদেশের পুলিশ বিভাগের গোয়েন্দা শাখা
তিনজন আন্দোলন সমন্বয়কারী- নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ এবং আবু বকের মজুমদারকে তুলে
নিয়ে যায়।
২৭
জুলাই ২০২৪: বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে ব্লক রেইড, বেশিরভাগ ছাত্র,
অব্যাহত রয়েছে। ডিএমপির গোয়েন্দা শাখা আরও দুই সমন্বয়কারী সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহকে
হেফাজতে নেয়া হয়। তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা দিতে এবং সাম্প্রতিক ঘটনা সম্পর্কে জানতে
তাদের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বলে জানায় ডিবি কার্যালয়।
গত ১১ দিনে মোট ৯,১২১ জনকে গ্রেপ্তার করা
হয়েছে। এর মধ্যে শুধু রাজধানীতেই গ্রেফতার হয়েছেন ২ হাজার ৫৩৬ জন।
ঢাকায় ১৪টি পশ্চিমা দেশের কূটনৈতিক মিশন
একটি যৌথ চিঠি জারি করে, যাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অন্যায় কাজের জন্য জবাবদিহি
করতে বলা হয়। ছাত্র আন্দোলনের আরও দুই সংগঠককে আটক করেছে গোয়েন্দা শাখা। শিক্ষার্থীদের
গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
শেখ হাসিনা আহতদের দেখতে পঙ্গু হাসপাতালে
যান এবং বলেন, অর্থনীতিকে পঙ্গু করতে সহিংসতা চালানো হচ্ছে।
২৮
জুলাই ২০২৪: কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুমকে
হেফাজতে নেয় ডিবি। পরে রাত ৯টার দিকে ডিবি কার্যালয়ে রেকর্ড করা একটি ভিডিও গণমাধ্যমে
পাঠানো হয় যেখানে আগে হেফাজতে নেওয়া ছয় সমন্বয়কারী সব কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা
দিয়ে একটি লিখিত বিবৃতি পড়ে শোনান।
তবে, তিন সমন্বয়কারী - মাহিন সরকার, আব্দুল
কাদের এবং আব্দুল হান্নান মাসুদ - বলেছেন যে, ডিবি হেফাজতে থাকা ছয় সমন্বয়কের ভিডিও
বার্তাটি বিক্ষোভকারীদের আসল অবস্থান নয়। সমন্বয়কারীদের ডিবি কার্যালয়ে জিম্মি করা
হয়েছিল এবং বার্তা পড়তে বাধ্য করা হয়েছিল।
তারা পৃথক বার্তায় বলেন, ডিবি কার্যালয়ে
অস্ত্রের মুখে ছয় সমন্বয়কের ভিডিও বিবৃতি দেওয়া হয়। ডিবি অফিস কখনোই শিক্ষার্থীদের
সংবাদ সম্মেলনের জায়গা নয়।
দেশব্যাপী ক্র্যাকডাউন চলছে, শুধুমাত্র
ঢাকা শহরে ২০০ টিরও বেশি মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে ২.১৩ লাখেরও বেশি লোক। মোবাইল
ইন্টারনেট ফিরে এসেছে, কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়া বন্ধ রয়েছে।
সরকার প্রথমবারের মতো মৃতের সংখ্যা ১৪৭
বলে জানিয়েছে।
২৯
জুলাই ২০২৪: সরকার ছাত্র নেতাদের মুক্তির আল্টিমেটাম উপেক্ষা করার পরে
ছাত্র এবং জনগণ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বড় আকারের বিক্ষোভ পুনরায় শুরু করে। ঢাকায়
২ হাজার ৮২২ শিক্ষার্থীকে আটক করেছে পুলিশ।
জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দেয়
সরকার। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের সাথে খাওয়ার ছবি শেয়ার করাসহ ছয় কোটা সংগঠককে উপস্থাপন
করা নিয়ে ডিবিকে তিরস্কার করেছে হাইকোর্ট।
সারা বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা
'নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষক সমাবেশ' ব্যানারে ছাত্র হয়রানি ও গণগ্রেফতার বন্ধের আহ্বান
জানিয়েছেন। তারা আটক শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবি জানান এবং চলমান শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের
সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন।
সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয়
বাংলায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থীদের স্মরণে
এক মুহূর্ত নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়, যাকে শিক্ষকরা ‘জুলাই গণহত্যা’ হিসেবে
আখ্যায়িত করেন।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে সহিংসতায় নিহতদের স্মরণে
মঙ্গলবার শোক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন সরকার ঘোষিত
শোক দিবস প্রত্যাখ্যান করে। পাল্টা পদক্ষেপে, তারা একটি অনলাইন প্রচারণা ঘোষণা করে,
তাদের মুখ এবং চোখের চারপাশে লাল ব্যান্ড দিয়ে ছবি পোস্ট করে।
৩০
জুলাই ২০২৪: যারা সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছে তাদের স্মরণে সরকার একটি
'শোক দিবস' পালন করে, কিন্তু ছাত্ররা দিনটিকে প্রত্যাখ্যান করে। ছাত্র আন্দোলনের সমর্থকরা
তাদের প্রত্যাখ্যান দেখানোর জন্য তাদের সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল লাল করে দেয় এবং
রাজধানীতে, অন্যান্য স্থানে বিক্ষোভ করে।
কোটা আন্দোলনের ছয় সংগঠক এখনও ডিবির হেফাজতে।
সহ পরীক্ষার্থীদের পুলিশ হেফাজত/জেল থেকে মুক্তি না দিলে শত শত এইচএসসি শিক্ষার্থী
পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেয়।
পুলিশের বাধার মুখে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের
ছাত্র-শিক্ষকদের মৌন মিছিল করে, বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সমাবেশ করে,
অভিভাবকরা শিশুদের মৃত্যুর প্রতিবাদ জানায়। প্রাণহানির জন্য সরকারকে দায়ী করেছেন
বিশিষ্ট নাগরিকরা। হাসিনা বলেছেন যে, সরকার বিচার বিভাগীয় তদন্তের জন্য 'বিদেশী সহায়তা'
নেবে এবং পরের দিন দেশব্যাপী শোক ঘোষণা করেছে। পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
৩১
জুলাই ২০২৪: হত্যা, গণগ্রেফতার, হামলা, মামলা, জোরপূর্বক গুম এবং ছাত্র
ও নাগরিকদের হত্যার প্রতিবাদে সারাদেশে ছাত্ররা ‘মার্চ ফর জাস্টিস' নামে প্রতিবাদ করেছে।
শিক্ষার্থীদের নয়টি সুনির্দিষ্ট দাবির
পক্ষে দেশব্যাপী আদালত প্রাঙ্গনে, ক্যাম্পাস এবং রাস্তায় দুপুর ১২ টায় বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত
হওয়ার কথা ছিল।
সকাল ১১টা ২০ মিনিটে শাহজালাল বিজ্ঞান
ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও সিলেটের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভের
সমর্থনে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট থেকে কোর্ট পয়েন্টের দিকে মিছিল করে।
দুপুর সোয়া ১টার দিকে বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হাইকোর্টের দিকে মিছিল করে। বাংলাদেশ শিশু একাডেমির কাছে পুলিশ তাদের অগ্রগতি বন্ধ করে দেয়।
ফলে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় ছাত্ররা দোয়েল চত্বরে
জড়ো হয়। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হোয়াইট প্যানেলের শিক্ষকরাও যোগ দেন। প্রায়
তিন ঘণ্টা বিক্ষোভের পর বিকেল ৩টার দিকে ঢাকায় বিক্ষোভ শেষ হয়।
সকাল ১১টায় বিক্ষোভকারীরা চট্টগ্রাম আদালত
চত্বরে জড়ো হতে শুরু করে। পুলিশ ব্যারিকেড সত্ত্বেও, প্রায় ২০০ জন বিক্ষোভকারী চত্বরে
প্রবেশ করে এবং অবস্থান নেয়। ৫০ থেকে ৬০ জন বিএনপিপন্থী আইনজীবী ছাত্রদের সঙ্গে একাত্মতা
প্রকাশ করেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা পাল্টা মিছিল করেন।
বেলা সোয়া ৩টার দিকে আদালত চত্বর থেকে
নিউমার্কেট মোড় পর্যন্ত একটি পদযাত্রার মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ শেষ হয়।
বিক্ষোভের অংশ হিসেবে দুপুর ১২টা ২০ মিনিট
থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের
শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ।
১৩ দিন বন্ধ থাকার পর বিকেল ৩টায় ফেসবুক,
হোয়াটসঅ্যাপসহ অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো আবার খুলে দেওয়া হয়।
১
আগস্ট ২০২৪: সরকার জামায়াতে ইসলামী দল এবং এর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র
শিবিরের পাশাপাশি এর সহযোগী সংগঠনগুলোকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে নিষিদ্ধ করে একটি
প্রজ্ঞাপন জারি করে। জাতিসংঘ সহিংসতা তদন্তে একটি স্বাধীন ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং দল পাঠানোর
প্রস্তাব দেয়। আন্দোলনের ছয় সংগঠককে পুলিশ হেফাজত থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। বিক্ষোভকারীরা
নিহতদের জন্য গণ মিছিল, দোয়া ও মোনাজাত করে। পাঁচটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা
বিক্ষোভ সমাবেশ করে।
২
আগস্ট ২০২৪: বিক্ষোভকারীরা হত্যার প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছে; হাজার হাজার
মানুষ বিচারের জন্য মিছিলে যোগ দেয়। রাজধানীসহ অন্যত্র আ.লীগ নেতাকর্মী ও পুলিশের
হামলায় বিক্ষোভকারীরা আরও দুজন নিহত হন। বিক্ষোভকারীরা আগামী দিনের জন্য দেশব্যাপী
বিক্ষোভ এবং ৪ আগস্ট থেকে অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দেয়।
সাত ঘণ্টার জন্য আবারও বন্ধ হয়ে গেল ফেসবুক।
ডিবি হেফাজতে থাকা ছয় সংগঠক বলেন, ডিবি অফিস থেকে প্রত্যাহারের বিবৃতি স্বেচ্ছায়
দেননি।
চলমান সহিংসতা ও নাশকতার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে
সংশ্লিষ্ট মামলায় গ্রেপ্তার ৭৮ এইচএসসি পরীক্ষার্থী সারাদেশের বিভিন্ন আদালত থেকে
জামিন পান। তাদের মধ্যে ঢাকা বিভাগের ৫৫ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের ১৪ জন, খুলনা বিভাগের
ছয়জন এবং রংপুর বিভাগের তিনজন রয়েছেন।
এদিকে, শিশু ও সংস্কৃতি বিষয়ক জাতিসংঘের
সংস্থা, ইউনিসেফ, জুলাই মাসে বাংলাদেশে ২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে বিক্ষোভের
সময় কমপক্ষে ৩২ শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে।
ইউনিসেফের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক
সঞ্জয় উইজেসেকেরা শিশুরা যাতে আবার স্কুলে ফিরে আসে তা নিশ্চিত করতে দ্রুত ব্যবস্থা
নেওয়ার আহ্বান জানান।
৩
আগস্ট ২০২৪: কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী নাহিদ ইসলাম ঘোষণা করেন যে তাদের
সরকারের সাথে আলোচনার কোন পরিকল্পনা নেই এবং হাসিনার পদত্যাগ এবং ‘সবার কাছে গ্রহণযোগ্য’
একজন ব্যক্তির নেতৃত্বে ‘জাতীয় সরকার’ গঠনের দাবিতে লংমার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি ঘোষণা
করেন।
হাসিনা আলোচনার প্রস্তাব দিলেও ছাত্ররা
তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে।
বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে, প্রধান সমন্বয়কদের
একজন নাহিদ ইসলাম শহীদ মিনারে সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন, যেখানে বৈষম্য
বিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রিসভার পদত্যাগের জন্য একক
দাবি ঘোষণা করে এবং আহ্বান জানায়। গত ৪ আগস্ট থেকে ব্যাপক অসহযোগ আন্দোলন যা কোটা
আন্দোলনের অবসান ঘটিয়েছে।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজশাহীর বিভিন্ন
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মিছিল করে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের
(রুয়েট) সামনে জড়ো হয়ে স্লোগান দেয়। একক দাবিতে রাজপথে নেমেছে শিক্ষার্থীরা: প্রধানমন্ত্রীর
পদত্যাগ।
চট্টগ্রামে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান
চৌধুরীর বাসায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বাড়ির সামনে পার্কিং করা দুটি গাড়ি ভাঙচুর
এবং একটিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এর আগে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে লালখান বাজারে চট্টগ্রাম-১০
আসনের সংসদ সদস্য মহিউদ্দিনের কার্যালয়েও হামলা হয়। হামলার সময় অফিসে আগুন দেওয়া
হয়। অপর একটি ঘটনায় গাজীপুরের শ্রীপুরে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে
একজন নিহত হয়েছেন।
রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের
শিক্ষার্থী ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের মূল সমন্বয়ক আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনায় দুই পুলিশ
কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ওই দুই কর্মকর্তা হলেন- রংপুর পুলিশ লাইন্সের
এএসআই আমির হোসেন ও তাজহাট থানার কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়।
সিলেটে পুলিশের সঙ্গে ছাত্র-ছাত্রীদের
সংঘর্ষে অন্তত শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে।
দুপুর দেড়টার দিকে কুমিল্লার রেসকোর্সে
ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-জনতার
ওপর হামলা চালায় এবং শিক্ষার্থীদের ওপর প্রকাশ্যে গুলি চালায়, এতে ১০ জন শিক্ষার্থী
গুলিবিদ্ধ হয় এবং মোট ৩০ জন আহত হয়।
বগুড়ায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে
পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এই সংঘর্ষ
চলে প্রায় দুই ঘণ্টা। সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড,
রাবার বুলেট ও শটগানের রাউন্ড নিক্ষেপ করে। নগরীর সাতমাথা, সার্কিট হাউস মোড়, রোমেনা
আফাজ রোড, কালীবাড়ি মোড়, বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল বাকী সড়ক, জেলখানা মোড়সহ বেশ
কয়েকটি এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
এতে অন্তত ছয়জন শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ
হন এবং আরও পঞ্চাশজন শিক্ষার্থী আহত হন।
৪
আগস্ট ২০২৪: ঢাকা এবং দেশের অন্তত ২১টি জেলায় ব্যাপক সংঘর্ষের ফলে
১৪ পুলিশ কর্মকর্তাসহ প্রায় ৯১ জন নিহত হওয়ার সাথে দিনটি বিক্ষোভের সবচেয়ে মারাত্মক
হয়ে ওঠে। গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, সহিংসতায় অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে
সিরাজগঞ্জে গণপিটুনিতে নিহত ১৩ পুলিশ সদস্য রয়েছে।
বিক্ষোভকারীরা এবং পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ
শুরু হয়, যখন বিক্ষোভকারীরা প্রধান মহাসড়ক অবরোধ করে। পুলিশ স্টেশনের পাশাপাশি আওয়ামী
লীগের কার্যালয়কে লক্ষ্য করে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতা। পুলিশ বাহিনী কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে
এবং রাবার বুলেট ছুড়েছে বলে দাবি করেছে যদিও কিছু লোক প্রকৃত বুলেটে আহত ও নিহত হয়েছে।
নতুন করে বিক্ষোভের ফলে সরকার ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয় এবং সন্ধ্যা ৬টা থেকে দেশব্যাপী
অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ ঘোষণা করে।
হাসিনা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সমালোচনা
করে বলেন যে যারা 'নাশকতা' এবং ধ্বংসযজ্ঞে জড়িত তারা আর ছাত্র নয় বরং সন্ত্রাসী,
যখন বিক্ষোভকারীরা তাকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানায়।
সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করার লক্ষ্যে শিক্ষার্থীরা
দেশের সব প্রান্ত থেকে ঢাকায় পদযাত্রা করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। সেনাবাহিনী ও পুলিশ
জনগণকে কারফিউ না ভাঙতে বা আইন লঙ্ঘন না করার আহ্বান জানায়।
সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া
সেনা প্রত্যাহারের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান এবং হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানান।
বর্তমান সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, সশস্ত্র বাহিনী সর্বদা জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে।
৫
আগস্ট ২০২৪: দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ কারফিউ অমান্য
করে রাজধানীর কেন্দ্রে একত্রিত হয়। হাসিনার পতনের প্রাক্কালে আওয়ামী লীগ বিভিন্ন
স্থানে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালিয়ে আগ্রাসন প্রদর্শন করে। ‘মার্চ টু ঢাকা’ ডাকে
সাড়া দিয়ে হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও দেশবাসী রাজধানী অভিমুখে যাত্রা শুরু করে। দুপুর
নাগাদ ভিড় ভিড় করে হাসিনার সরকারি বাসভবনে।
বিকেলে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের
কাছে তার পদত্যাগপত্র হস্তান্তর করেন হাসিনা। এরপর হাসিনা তার বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে
সামরিক বিমানে করে প্রতিবেশী দেশ ভারতে পালিয়ে যান।
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বিভিন্ন
রাজনৈতিক দলকে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানান এবং পরে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের বিষয়টি
নিশ্চিত করেন।
জনসাধারণ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনের
নিয়ন্ত্রণ নিয়ে, জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করার সাথে সাথে ঢাকা জুড়ে উদযাপনের কুচকাওয়াজ
শুরু হয়।
সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন বঙ্গভবনে বিএনপি ও জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ঘোষণা দেন।