ইরানে আক্রমণ চালানো আমেরিকার জন্য অবৈধ: পুতিন
ইরানে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের হামলা কোনোভাবেই বৈধতা দেয়া যায়না বলে মন্তব্য করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। কার্যত এই মন্তব্যের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের হামলাকে অবৈধ ঘোষণা করলেন তিনি।
সোমবার মস্কোতে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচির সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ মন্তব্য করেন রুশ প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, ইরানের ওপর সাম্প্রতিক হামলা একেবারেই বিনা উস্কানিতে করা হয়েছে, এমন হামলার কোনোভাবেই বৈধতা দেয়া যায় না। এ খবর দিয়েছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাস। এতে বলা হয়, ইরানের পক্ষে রাশিয়ার অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন পুতিন। বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের অবস্থান সকলেরই জানা আছে। যা রাশিয়ার পক্ষ থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় বারবার ব্যক্ত করেছে।
এর আগে এক বিবৃতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার কঠোর নিন্দা জানায় রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অবিলম্বে যুদ্ধ ও শত্রুতা বন্ধ করে কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সংকট নিরসনের আহ্বান জানায় তারা। ১৩ জুন ইরানে হামলা চালায় ইসরাইল। এর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য উত্তপ্ত হয়ে উঠে। সেদিন থেকেই ইসরাইলকে লক্ষ্য করে প্রতিশোধমূলক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করেছে ইরান। এর মধ্যে ২২ জুন ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর পরেই ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করতে মস্কো পৌঁছান।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে পুতিনকে খামেনির চিঠি
যুক্তরাষ্ট্রের হামলার বিষয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সহায়তা চেয়ে চিঠি দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। ইরানের একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন। খামেনির দেয়া চিঠি নিয়ে রাশিয়ায় পৌঁছেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি। ইতি মধ্যেই চিঠিটি রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।
খামেনির ওই চিঠি পুতিনের কাছে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। এছাড়া আজ ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও বৈঠক করবেন পুতিন। এ খবর দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে- সূত্র জানিয়েছেন, এখনও মুগ্ধ হওয়ার মতো রুশ সমর্থন পায়নি ইরান। তবে এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। এতে ইরান চায় ইসরাইল ও মার্কিন হামলার বিরুদ্ধে আরও কিছু করুক পুতিন।
যদিও খামেনি কেমন সহায়তার কথা জানিয়েছেন সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি সূত্রটি। ক্রেমলিন জানিয়েছে পুতিন আরাঘচিকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে তাদের মধ্যে কোন বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে সে বিষয়ে কোনো ইঙ্গিত দেয়নি মস্কো। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে আরাঘচি বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সংকট নিরসনে ইরান ও রাশিয়া একে অপরকে সহযোগীতা করছে।
ইসরাইলের হামলার পর এর নিন্দা জানান পুতিন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার বিষয়ে এখনও মুখ খোলেনি রাশিয়ার এই নেতা। এমন এক সময় পুতিনকে চিঠি দেয়া হয়েছে যখন ইরানে ক্ষমতার পরিবর্তন ও খামেনিকে হত্যার সরাসরি হুমকি দিয়েছে ইসরাইল।
চিঠির জবাবে পুতিন কি পদক্ষেপ নেবেন বা আদও কিছু করবেন কিনা সে বিষয়ে কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। তবে এর আগে পুতিন ইসরাইলকে সম্পূর্নরূপে তাদের হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। বলেছেন, খামেনিকে হত্যা করা হলে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার পথ বন্ধ হয়ে যাবে। এখানে বলে রাখা ভালো তেহরানের দীর্ঘদিনের মিত্র রাশিয়া। মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের পরাজয়ের অর্থ রাশিয়ার পরাজয়। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো দেয়ার ক্ষমতা রয়েছে দেশটির। মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে পুতিনের ভূমিকা কি হবে তা বুঝা যাবে আরাঘচির সঙ্গে তার বৈঠকের পর।
ইরানের বিমানবন্দরে হামলা চালানোর দাবি আইডিএফএর
ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা ইরানের পশ্চিম, পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলের কমপক্ষে ছয়টি বিমানবন্দরে বিমান হামলা চালিয়েছে। ইসরাইলের হিব্রু ভাষার এক্স অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, রিমোট-নিয়ন্ত্রিত ড্রোনের মাধ্যমে ১৫টি ইরানি বিমান ও হেলিকপ্টার ধ্বংস করা হয়েছে। পোস্টে সংযুক্ত একটি ছবিতে মেহরাবাদ, মাশহাদ ও দেজফুল বিমানবন্দরকে লক্ষ্যবস্তু হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এই হামলায় রানওয়ে, ভূগর্ভস্থ বাংকার, একটি রিফুয়েলিং (জ্বালানি সরবরাহকারী) বিমান এবং ইরানি বাহিনীর এফ-১৪, এফ-৫ ও এএইচ-১ মডেলের বিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিমান বাহিনী এসব বিমানবন্দর থেকে বিমান উড্ডয়নের সক্ষমতা এবং সেখান থেকে ইরানি সেনাবাহিনীর আকাশশক্তি পরিচালনার সামর্থ্য ব্যাহত করেছে। ইসরাইলি বাহিনী এমন দাবি করলেও ইরান থেকে এ বিষয়ে মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা।