কোন রোগের জন্য কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যাবেন? সম্পূর্ণ গাইড
হঠাৎ অসুস্থ হলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এর শরণাপন্ন হওয়ার কথা সবই জানেন। তবে কোন
রোগের জন্য কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যাবেন? যেকোনো রোগের চিকিৎসা
কিন্তু যেকোনো চিকিৎসকই দেন না। রোগীর সুচিকিৎসা নিশ্চিতে চিকিৎসকদের কিছু
শ্রেণিবিভাগ রয়েছে। আর সে শ্রেণিবিভাগ অনুযায়ীই চিকিৎসকরা চিকিৎসা সেবা রোগীদের
দিয়ে থাকেন।
রোগাক্রান্ত হলে নির্দিষ্ট রোগের চিকিৎসা পেতে আপনাকে নির্দিষ্ট চিকিৎসকের কাছেই
যেতে হবে। তাই রোগভেদে আপনাকে কোন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে তা জানা প্রয়োজন।
একটি প্রতিবেদন অনুসারে আসুন জেনে নিই, ইবনে সিনা হাসপাতাল ধানমন্ডি কোন রোগের
জন্য কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার
আমরা জানি চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিভিন্ন রোগের জন্য স্পেসিফিকভাবে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ
ডাক্তার আছেন রোগীর সঠিক চিকিৎসা করার জন্য। আমরা অনেক সময় বুঝতে পারি না কোন
রোগের জন্য কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যাব।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা সব রোগেরই চিকিৎসা করতে পারেন। তবে তারা যখন অপারগ হয়, তখন
অন্য ডাক্তার বা অন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে রেফার করেন।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা যেসকল বিষয়ে চিকিৎসা প্রদান করে থাকেন-
- ডায়াবেটিস, থাইরয়েড সহ সকল হরমোন রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা।
- আলসার, গ্যাস্ট্রো সহ পেটের সমস্ত রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা।
- জন্ডিস, সিরোসিস, হেপাটাইটিস বি ও সি, লিভার চর্বি সহ লিভারের যাবতীয় রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা।
- অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট, টিবিসহ সকল বক্ষব্যাধি রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা।
- বাতব্যাথা, গিরাব্যাথা, রিউমাটোলজি রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা।
- মাথা ব্যাথা, মৃগী রোগ সহ ব্রেন, নার্ভের সকল রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা।
- ফুলে যাওয়া, পাথর সহ কিডনী রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা।
- বুকে ব্যাথা, হাঁপিয়ে যাওয়া সহ হৃদরোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা ।
- রক্তশূণ্যতা, থ্যালাসেমিয়া সহ যোকোন রক্তরোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা ।
- চর্মরোগ, যৌন রোগ ও মানসিক রোগের চিকিৎসা।
- ইনফেকশন, জ্বরসহ যে কোন মেডিসিন রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা।
ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
ফিজিক্যাল মেডিসিন হলো চিকিৎসাবিজ্ঞানের একটি বিশেষ শাখা যা শারীরিক প্রতিবন্ধকতা
বা অক্ষমতার চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে কাজ করে। এটি মূলত মস্তিষ্ক, মেরুদন্ড,
স্নায়ু, হাড়, জয়েন্ট, লিগামেন্ট, পেশী ইত্যাদি অঙ্গের আঘাত বা রোগের কারণে
সৃষ্ট সমস্যা গুলোর চিকিৎসা করে। ফিজিক্যাল মেডিসিনের লক্ষ্য হল রোগীকে তার
সর্বোচ্চ কার্যক্ষমতা ফিরিয়ে দিয়ে জীবনযাত্রার মান উন্নত করা।
লক্ষনীয়, মেডিসিন, নিউরো-মেডিসিন, অর্থোপেডিকস অথবা রিউমাটোলজি বিশেষজ্ঞ
ডাক্তারদের পরামর্শ দিলেই তবে ফিজিক্যাল মেডিসিন ডাক্তার দেখানো উচিত।
নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ ডাক্তার (ই এন টি)
নাক, কান, গলায় যেকোনো সমস্যা বা অসুখ হলে এর চিকিৎসার জন্য আপনাকে একজন ইএনটি
বিশেষজ্ঞকে দেখাতে হবে। নাক, কান, গলাকে সংক্ষেপে বলা হয় ইএনটি। আর এর বিশেষজ্ঞ
চিকিৎসকদের বলা হয় ইএনটি ডাক্তার।
ডার্মাটোলোজিস্ট (চর্ম, এলার্জি ও যৌন)
কোন অসুখে একজন ডার্মাটোলোজিস্ট ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন জানেন? ত্বক, চুল, নখ,
মুখ-নাকের ঝিল্লি এবং চোখের পাতার আস্তরণে কোনো সমস্যা অনুভব করলে একজন চর্মরোগ
বিশেষজ্ঞ বা ডার্মাটোলোজিস্ট ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নিতে হবে।
বিশেষত - গনোরিয়া, ঘা-পচড়া, চুলকানী, চামড়ার রং পরিবর্তন, ফোসা পড়া , পুরুষ বা মহিলার যোনাঙ্গে ঘা-পচড়া ইত্যাদি। যৌন দুর্বলতার কারনে মেডিসিন ডাক্তার দেখাতে হবে।
নিউরোলজিস্ট (স্নায়ুতন্ত্রের বিশেষজ্ঞ)
একজন নিউরোলজিস্ট বা স্নায়ুতন্ত্রের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে তখনই যাবেন যখন
মস্তিষ্কজনিত ব্যধিতে আপনি ভুগবেন। মনে রাখবেন, স্নায়ুতন্ত্র একটি বিশাল
নেটওয়ার্ক যা শরীরের সব অঙ্গের ক্রিয়াকলাপে কাজ করে। তাই হাত বা পায়ে সমস্যা
হলে সেটা স্নায়ু জনিত নাকি পেশী সমস্যাজনিত তাও নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। বর্তমান
সময়ে স্ট্রোকের সমস্যা বেড়েছে। মনে রাখবেন স্ট্রোকের রোগীর চিকিৎসায় দ্রুত আপনাকে
নিউরোলজিস্ট বা স্নায়ুতন্ত্রের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চিকিৎসা পরামর্শ নিতে হবে।
(Paralysis, Brain tumor, stroke, epilepsy)
পডিয়াট্রিস্ট
পা, গোড়ালি বা পায়ে প্রভাব ফেলছে এমন কোনো অবস্থায় এই ধরনের বিশেষজ্ঞের কাছে
যেতে হবে। একজন পডিয়াট্রিস্ট পায়ের পাতা, গোড়ালি, পা এবং তার আশপাশের কাঠামোর
অবস্থা নির্ণয় এবং চিকিৎসা করেন।
অর্থোপেডিক্স বিশেষজ্ঞ
হাড়ের সাথে সম্পর্ক রয়েছে এমন সব রোগের চিকিৎসায় একজন অর্থোপেডিক্স বিশেষজ্ঞর
পরামর্শ আপনাকে নিতে হবে। অর্থোপেডিক্স বিশেষজ্ঞরা হাড় ভাঙা, হাড় জোড়া, হাড়
ক্ষয়, হাড়ের জয়েন্টে ব্যথা, হাঁটুতে ব্যথা, পঙ্গুত্বসহ শরীরের হাড়ের সব ধরনের
চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন।
সাইকিয়াট্রিস্ট বা সাইকোলজিস্ট বা মনোরোগ বিশেষজ্ঞ
মানসিক অবসাদ, বিষণ্নতাসহ বিভিন্ন মানসিক সমস্যার চিকিৎসার জন্য একজন মনোরোগ
বিশেষজ্ঞর কাছে আপনাকে যেতে হবে।
কার্ডিওলজিস্ট বা হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ
হার্ট বা হৃৎপিণ্ডের যেকোনো সমস্যার চিকিৎসা নিতে আপনাকে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ
ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। কার্ডিওলজিস্ট বা হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা হার্ট অ্যাটাক,
বুকে ব্যথা, উচ্চ রক্তচাপ (হাইপারটেনশন), হার্ট ফেইলিওর, বুক ধড়ফড় করা ইত্যাদি
রোগের চিকিৎসা প্রদান করেন।
মনে রাখতে হবে পেশার বা HTN রোগী অবশ্যই মেডিসিন ডাক্তার দেখাবে।
গ্যাস্ট্রোলজি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার (Gastroenterology)
এ ডাক্তারকে অনেকে হেপাটোলজি বা লিভার বা যকৃৎ বিশেষজ্ঞও বলে থাকেন।
পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা, জন্ডিস, গ্যাসের সমস্যা, হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস,
লিভার সিরোসিস, খাদ্যনালি বা পাকস্থলীতে ক্ষত বা ঘা,খাবারের অরুচি, খিদে না
পাওয়ার সমস্যা, লিভারে চর্বি ও পেটে গ্যাস, অ্যসিডিটি এমন রোগের চিকিৎসা দেন
গ্যাস্ট্রোলজি বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষভাবে- দীর্য়দিনের ডায়রিয়া, পায়খানা কষা হওয়া, পায়খানার ও বমির সাথে রক্ত যাওয়া, আলসার বা পেপটিক আলসার) , পেটে অনেক ব্যাথ্যা।
বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার (রিসপেরিটরি)
অ্যাজমা বা হাঁপানি, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা, নিউমোনিয়া ও দীর্ঘদিন যাবত কাশি,
ফুসফুসে পানি জমা সমস্যায় ভুগলে আপনাকে একজন বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে
যেতে হবে। তারা মূলত ফুসফুসের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা সেবা দিয়ে
থাকেন।
চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার (অপথালমোলজি)
চোখের যেকোনো সমস্যাসহ চশমার পাওয়ারের বিভিন্ন বিষয়ে চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন
চক্ষু বিশেষজ্ঞ বা আই স্পেশ্যালিস্টরা। অনেক সময় চোখের সমস্যা থেকে মাথা ব্যাথার
সমস্যায় রোগীকে ভুগতে দেখা যায়। এমন পরিস্থিতিতে মাথা ব্যথার কারণ যদি চোখের
সঙ্গে সম্পর্কিত হয় তবে সেক্ষেত্রে চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে থাকেন চক্ষু
বিশেষজ্ঞরা।
রিউমাটোলজি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার (Rheumatology)
আর্থ্রাইটিস এবং জয়েন্ট, পেশী এবং হাড়ের অন্যান্য রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা
প্রদানে অভিজ্ঞ। এছাড়াও বাত-ব্যাথা ও বাত-জ্বরের চিকিৎসা প্রদান করে থাকেন।
হাত-পায়ের গিট ফুলে লাল হয়ে গেছে, হাত পা ভাজ করতে পারছেন না তাহলে বুঝবেন আপনার বাত-ব্যাথা রয়েছে এক্ষেত্রে আপনি রিউমাটোলজি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন।
কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ (নেফ্রোলজি)
নেফ্রোলজিস্ট হলেন এমন একজন ডাক্তার যা কিডনি সম্পর্কিত সমস্যাগুলি সমাধান এবং
চিকিত্সা করতে বিশেষজ্ঞ। তারা কিডনির সমস্যা যেমন কিডনিতে সংক্রমণ, কিডনি রোগ,
কিডনিতে পাথর এবং আরও অনেক কিছু সনাক্ত করতে সহায়তা করতে পারে।
কিভাবে বুঝবেন আপনার কিডনিতে সমস্যা- ১. প্রসাবের পরিমান কম হলে, ২. হাতে পায়ে পানি চলে আসলে। এছাড়াও - প্রস্রাব করার সময় জ্বালাপোড়া, ঘন ঘন প্রস্রাব, প্রস্রাব লাল হওয়া, প্রস্রাবে দুর্গন্ধ, কোমরের দুই পাশে ও তলপেটে প্রচণ্ড ব্যথা, শরীর-মুখ ফোলা ইত্যাদি লক্ষণ কিডনি রোগের সংকেত বহন করে।
অর্থোপেডিক (orthopedic)
দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা, দুর্বল অস্থির রোগ বা মেরুদণ্ডের জটিল রোগ নির্ণয়ের জন্য,
রোগীরা নিউ ইয়র্ক স্পাইন ইনস্টিটিউটের অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞদের কাছে যেতে পারেন।
কখন যাবো- স্পোর্টস ইনজুরি, গাড়ি দুর্ঘটনা, অস্বাভাবিক মেরুদণ্ডের বক্রতা, হাটা-চলায় সমস্যা, (হাত-পা বা কোন হাড় ভেঙ্গে গেলে।
সর্বপরি, আজকের আলোচনার মাধ্যমে জানতে পারলাম আমাদের কি ধরণের সমস্যা হলে কোন
ডাক্তারের কাছে যাবো।