ইরান-ইসরাইল সংঘাতের সর্বশেষ সংবাদ জানুন

নিম পাতা দিয়ে দ্রুত ব্রণ দূর করার উপায় ও ত্বক ফর্সা করার বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি

নিম পাতা দিয়ে দ্রুত ব্রণ দূর করার উপায় ও নিমপাতা দিয়ে ত্বক ফর্সা করার বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি সম্পর্কে আজকে আমরা তথ্যবহুল আলোচনা করবো। ব্রণের দূর করতে ও ত্বক ফর্সা করার জন্য প্রাচীনকাল থেকেই নিমপাতা ব্যবহার হয়ে আসছে।

নিমপাতায় ব্রণের দাগ দুর হবে ১ সপ্তাহে। নিমপাতা দিয়ে ত্বক ফর্সা করার বৈজ্ঞানিক  উপায়

নিম পাতা দিয়ে দ্রুত ব্রণ দূর করার উপায়

দ্রুত ব্রণ দূর করতে ও ত্বক ফর্সা করার জন্য নিমপাতা সরাসরি ব্যবহার করা না হলেও বিভিন্ন ফেসপ্যাক তৈরি করে তা ব্যবহার করা হয়ে আসছে। নিমপাতা ত্বককে উজ্জ্বল করতে এবং বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সাহায্য করতে পারে। রূপচর্চার রুটিনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদানটি হলো ‘নিম’। স্বাস্থ্যগত গুণাগুণের পাশাপাশি নিম ত্বক এবং চুলের যত্নে অপরিহার্য।

বিশেষকরে মেয়েদের ব্রণ, ব্ল্যাকহেড, বলিরেখা, খুশকি কিংবা চুল পড়ার সমস্যাতেও নিঃসন্দেহে নিমপাতা ব্যবহার করা যায়। এটি ত্বককে নরম ও কোমল করে ত্বককে সুস্থ রাখে।

বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা যায় নিম পাতায় রয়েছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়া ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের ত্বককে বিভিন্ন ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া থেকে বাঁচতে ও ত্বককে পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যকর রাখতে সহায়তা করে। তাছাড়াও নিমপাতায় রয়েছে অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি, এন্টি ভাইরাস এবং ছত্রাক বিনাশক শক্তি। এসব উপাদান এবং শক্তি থাকার কারণে আমাদের ত্বক ফর্সা এবং আর্দ্রতা বজায় থাকে।

বহুদিন ধরে রূপচর্চায় নিমপাতার ব্যবহার হয়ে আসছে। ত্বকের দাগ দূর করতে নিমপাতা খুব ভালো কাজ করে। এছাড়াও এটি ত্বকে ময়েশ্চারাইজার হিসেবেও কাজ করে। ব্রণ দূর করতে নিমপাতা বেটে লাগালে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

মাথার ত্বকে অনেকেরই চুলকানি ভাব হয়। নিমপাতার রস মাথায় নিয়মিত লাগালে এ চুলকানি কমে। নিয়মিত নিমপাতার সঙ্গে কাঁচা হলুদ পেস্ট করে লাগালে ত্বকের উজ্জলতা বৃদ্ধি ও স্কিন টোন ঠিক হয়। আজকের আলোচনায় আমরা ব্রণ দূর করতে নিমপাতার পাঁচটি কার্যকর ফেসপ্যাক সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো।

ত্বক ফর্সা করতে নিম পাতার বৈজ্ঞানিক ব্যবহার

নিম এশিয়া মহাদেশ তথা উপমহাদেশের একটি অতি পরিচিত ঔষধি গাছ। এর পাতা, ছাল, ফুল, ফল ও বীজ প্রায় সব অংশেই রয়েছে স্বাস্থ্য উপকারিতা। বিশেষ করে নিমপাতা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আয়ুর্বেদিক ও প্রাকৃতিক চিকিৎসায় ব্যবহার হয়ে আসছে। চলুন জেনে নিই নিমপাতা নিমপাতা খাওয়ার নিয়ম, উপকারিতা, কীভাবে ও কতটুকু খেলে উপকার পাওয়া যায়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, “নিমপাতা একটি প্রাকৃতিক মহৌষধ, যা আমাদের শরীরের বহুবিধ সমস্যার প্রতিরোধ ও প্রতিকারে কাজ করে। এর তিক্ত স্বাদ সত্ত্বেও সঠিক নিয়মে ও সঠিক পরিমাণে নিয়মিত গ্রহণ করলে এটি দেহকে ভেতর থেকে সুস্থ ও সতেজ রাখতে সহায়তা করে।” নিমপাতা ছাড়াও থানকুনি পাতা ত্বক ফর্সা ও উজ্জলতা বৃদ্ধি করে

চলুন জেনে নিই নিমপাতা কিভাবে খেলে উপকার পাওয়া যায়। নিমপাতা কাঁচা খাওয়া যায়, আবার রস করেও খাওয়া যায়। নিমপাতা তেতো স্বাদ যুক্ত হওয়ায় অনেকে রস করে চিনি বা গুড় মিশিয়ে খেয়ে থাকেন এছাড়াও অনেকেই রস করে পান করাকে বেশি পছন্দ করেন। প্রতিদিন ৫-৭ টি তাজা নিমপাতা খাওয়া সাধারণত নিরাপদ বলে ধরা হয়, বিশেষ করে যদি আপনি তা খালি পেটে সকালে খান।

ত্বক ফর্সা করতে নিম পাতার ৫টি ফেসপ্যাক

মুখ ভর্তি ব্রণ, দাগ?  নিমপাতার গুঁড়ো, পেস্ট এভাবে লাগান

ত্বক ব্রণমুক্ত রাখতে, রুক্ষতা দূর করতে, উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে, সতেজ ও দাগমুক্ত রাখতে নিমপাতার ফেসপ্যাক নিয়মিত ব্যবহার করতে পারেন। নিমপতা প্রাকৃতিম মাহৌষধ আর প্রাকৃতিক এই উপাদানের সঙ্গে অন্য উপাদান ব্যবহার করলে এর কার্যক্ষমতা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। চলুন জেনে নিই ফেসপ্যাক তৈরি ও ব্যবহার পদ্ধতি:

১. নিম পাতা, বেসন ও টক দই ফেসপ্যাক
  • এক টেবিল চামচ বেসনের সঙ্গে এক চা চামচ নিমপাতা বাটা বা গুঁড়া ও আধা টেবিল চামচ টক দই একসঙ্গে মিশিয়ে ঘন মিশ্রণ তৈরি করতে হবে। এরপর মুখ ভালো ভাবে পরিষ্কার করে নিমপাতা, বেসন ও টক দই প্যাক মুখে ভলো ভাবে ম্যাসেজ করুন।
  • ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে নরমাল তাপমাত্রায় থাকা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে অন্তত দুদিন এই প্যাক মুখে ব্যবহার করলে ত্বক ব্রণমুক্ত ও উজ্জল থাকবে।
২. নিম পাতা, চন্দনের গুঁড়া ও দুধ ফেসপ্যাক
  • এক চা চামচ চন্দনের গুঁড়ার সঙ্গে আধা চা চামচ নিমপাতা বাটা ও এক টেবিল চামচ দুধ একসঙ্গে মিশিয়ে এই প্যাক তৈরি করত হবে। পরিমাণের ব্যপারে সতর্ক থাকুন। প্যাকটি মুখে লাগিয়ে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এবার অল্প পানি দিয়ে মুখে কিছুক্ষণ ম্যাসাজ করুন এবং ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত বিরতিতে ব্যবহারে এই প্যাক ত্বক নরম ও মসৃণ রাখতে সাহায্য করে।
৩. নিম পাতা ও মধুর ফেসপ্যাক
  • এক চা চামচ নিমপাতা বাটার সঙ্গে এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে এই প্যাক তৈরি করা যায়। এই প্যাক মুখে লাগিয়ে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন।
  • এবার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। নিমপাতা ও মধুর ফেসপ্যাক ত্বক সতেজ করে এবং ত্বকের তেলতেলে ভাব দূর করে।
৪. নিম পাতা, টক দই ও হলুদ গুঁড়া ফেসপ্যাক
  • এক চা চামচ নিমপাতা বাটার সঙ্গে এক টেবিল চামচ টক দই ও সামান্য হলুদ গুঁড়া একসঙ্গে মিশিয়ে অত্যন্ত কার্যকর একটি প্রাকৃতিক সল্যুশন তৈরি করা যেতে পারে।
  • ত্বকে লাগালোর পার শুকারো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। নিমপাতা, টক দই ও হলুদ গুঁড়া ফেসপ্যাক ত্বকের মেছতার দাগ দূর করে ও ত্বক নরম করে।
৫. নিম পাতা, আপেল সিডার ভিনেগার ও মধু ফেসপ্যাক
  • এক চা চামচ নিমপাতা বাটার সঙ্গে এক টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার ও এক চা চামচ মধু মিশিয়ে ঘন মিশ্রণ তৈরি করতে হবে। এই প্যাক ত্বকে লাগিয়ে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন।
  • শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে হালকা ম্যাসাজ করুন। এরপর ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাক মাত্র এক সপ্তাহেই ব্রণের দাগ দূর করে এবং ত্বক টানটান করে।

নিম পাতা দিয়ে গোসল করার উপকারিতা

নিমপাতা ঔষুধি গুন থাকায় নিম পাতা দিয়ে গোসল করলে ত্বকের নানা সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এবং শরীর ও মন সতেজ থাকে। নিম পাতা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান সমৃদ্ধ, যা ত্বককে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে এবং চুলকানি ও র‍্যাশের মতো সমস্যা কমাতে সহায়ক।

নিমপাতা ব্যবহারে আমাদের ত্বকের বহুবিধ সমস্যা হতে মুক্তি পাওয়া যায়। নিমপাতা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান থাকায় চর্মরোগ প্রতিরোধে বেশ সক্রিয়। নিয়মিত নিমপাতার দিয়ে গোসল করলে ত্বকে সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি, ব্রণ ও ফুসকুড়ি দূর করে, অ্যালার্জি, চুলকানি ও যৌনরোগ প্রতিরোধ, ত্বকের দাগ দূর করে, শরীরকে সতেজ করে, শরিরের দুর্গন্ধ দূর করে।

নিম পাতা চুলে দেওয়ার নিয়ম

চুলের যত্নে নিম পাতার ব্যবহার

নিম পাতা চুলের যত্নে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে প্রাচীনকাল থেকে। নিম পাতা সেদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে চুল ধোয়া যেতে পারে, অথবা নিম পাতা বেটে প্যাক তৈরি করে চুলে লাগানো যেতে পারে। এছাড়াও, নিম তেল এবং নিম পাতার গুঁডাও চুলের যত্নে ব্যবহার করা যেতে পারে।

আমাদের অনেকের চুল পড়া ও খুশকির সমস্যা  রয়েছে। অল্প বয়সে চূল পড়ে গিয়ে টাক হয়ে যাচ্ছে আবার শীত, গ্রীষ্ম কী বর্ষা কম-বেশি সব ঋতুতেই খুশকির সমস্যা দেখা যায়। খুশকির সমস্যা খুবই সাধারণ কিন্তু খুবই বিব্রতকর। আজকে আমরা চুল পড়া ও খুসকির সমস্যা সমাধানে নিয়ে বিজ্ঞান সম্মত আলোচনা করার চেষ্টা করবো।

চুল পড়া ও খুসকির সমস্যা সমাধানে নিমপাতার বিভিন্ন হেয়ারপ্যাক ব্যবহার করা যেতে পারে। যদিও বাজারে নামে-বেনামে বিভিন্ন ঔষধ ও শ্যাম্পু পাওয়া যায় কিন্তু সবগুলোতেই হরেক রকমের কেমিকেল ভরপুর। তাই আসুন ঘরোয়া আর ভেষজ উপাদানে কীভাবে চুলপড়া ও  খুশকি তাড়াতে পারি তা জেনে নেই!

১. নিম পাতার পানি ব্যবহার
  • প্রথমেই কিছু পরিমাণ নিম পাতা নিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিন। এরপর একটি পাত্রে পানি নিয়ে তাতে নিম পাতা দিয়ে ১৫-২০ মিনিট ফুটিয়ে নিন। পানি ঠান্ডা হয়ে গেলে পাতা ছেঁকে ফেলে দিতে হবে এবং এই পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিতে হবে। সপ্তাহে ২-৩ বার এটি ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
২. নিম পাতার পেস্ট তৈরি করে ব্যবহার করা
  • কিছু নিম পাতা নিয়ে ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। এরপর পাতাগুলো ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে মিহি পেস্ট তৈরি করতে হবে। চাইলে এর সাথে টক দই বা মধু যোগ করলে পুষ্টি উপাদান বৃদ্ধি পাবে।
  • পেস্টটি মাথার ত্বক এবং চুলে ভালো করে লাগিয়ে ২০-৩০ মিনিট রেখে দিন। এরপর, হালকা শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এটি সপ্তাহে ১-২ বার ব্যবহার করলে চুল পড়া ও খুশকি সমস্যা অনেকাংশে কমে যাবে।
৩. নিম পাতা, টক দই ও মেথির পেস্ট তৈরি
  • নিমের পাতার মতো মেথিতেও আছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল আর অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান যা খুশকি তাড়ানোর পাশাপাশি মাথা ঠাণ্ডা রাখে । আর টক দইতো সবসময়ের জন্য ভালো কন্ডিশনার যা চুলের শুষ্কতা দূর করে।
  • নিম পাতা, টক দই ও মেথি পরিমাণমত নিয়ে ব্লেন্ড করুন। চুলে তেল দিয়ে তাতে এই পেস্ট লাগিয়ে ১ ঘণ্টা অপেক্ষা করুন। এরপর চুল শ্যাম্পু করুন। সপ্তাহে ২ বার এই পেস্ট ব্যবহার করুন ভালো ফল পাওয়ার জন্য।

নিম পাতা বেটে মুখে দিলে কি হয়

নিমপাতার বিভিন্ন ব্যবহার ইতোমধ্যে আমরা জেনেছি। এখন আমরা জানবো নিম পাতা বেটে মুখে দিলে কি হয়? নিমপাতা বেটে মুখে দিলে ত্বক পরিষ্কার হয়, ব্রণ ও ব্রণের দাগ কমে, এবং ত্বক উজ্জ্বল হয়। এছাড়াও, এটি ত্বকের সংক্রমণ ও প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।

নিমপাতা সরাসরি মুখে না লাগিয়ে পেস্ট তৈরি করে ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। পেস্ট যেভাবে তৈরি করবেন- কিছু নিম পাতা নিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিন। পাতাগুলো সামান্য পানি দিয়ে বেটে পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্টটি মুখে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। ভালো ফলাফলের জন্য সপ্তাহে ২-৩ বার এটি ব্যবহার করতে পারেন। 

নিমপাতা বেটে মুখে লাগালে যেসকল উপকার পাওয়া তা হলো- ব্রণ ও ব্রণের দাগ কমায়, ত্বকের সংক্রমণ কমায়, ত্বকের প্রদাহ কমায়, ত্বক উজ্জ্বল করে সর্বপরি ত্বক ফর্সা হতে সাহায্য করে।

লেখকের মতামত

নিমপাতা ব্যবহার করে দ্রুত ব্রণ দূর করা ও ত্বক ফর্সা করার বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি নিয়ে তথ্যবহুল আলোচনা করা হয়েছে। আশা করা যায় আজকের আলোচনার মাধ্যমে আপনাদের ত্বক ও ব্রণের সমস্যা সমাধান হবে। এছাড়াও চুল ও খুশকির সমস্যা সমাধানে নিম পাতার ব্যবহার আলোচনা করা হয়েছে। লেখাটি আপনাদের কেমন লাগলো কমেন্ট করে জানাবেন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url

ইরান-ইসরাইল সংঘাতের সর্বশেষ সংবাদ জানুন